জালালাবাদ
- একই নামের অন্যান্য জায়গার জন্য দেখুন জালালাবাদ (দ্ব্যর্থতা নিরসন).

জালালাবাদ (পশতু: جلال آباد) পূর্ব আফগানিস্তানে অবস্থিত একটি শহর, যেখানে প্রায় ৯,০০,০০০ জন মানুষের বাস।
জেনে নিন
[সম্পাদনা]জালালাবাদ নানগারহার প্রদেশের রাজধানী। এটি কাবুল এবং কুনার নদীর তীরে অবস্থিত এবং খাইবার গিরিপথ থেকে অল্প দূরত্বে। শহরটি পশ্চিমে কাবুল এর সাথে প্রায় ৯০ মা (১৪০ কিমি) মাইল দূরত্বের একটি মহাসড়ক এবং পূর্বে পাকিস্তান-এর পেশোয়ার এর সাথে প্রায় একই দূরত্বের সড়কপথে সংযুক্ত। জালালাবাদ ঐতিহাসিকভাবে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যা এই অঞ্চলের সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে।
জালালাবাদের আবহাওয়া গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত গরম, তাপমাত্রা ৪৫-৫০° সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়। শীতকাল মৃদু এবং তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক, তাপমাত্রা ৫-১৫° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। শহরটি তার কমলালেবুর বাগান এবং খেজুর গাছের জন্য বিখ্যাত, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, জালালাবাদের বাজারগুলো স্থানীয় কারুশিল্প, তাজা ফলমূল এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য পরিচিত।
প্রবেশ
[সম্পাদনা]আকাশপথে
[সম্পাদনা]জালালাবাদ বিমানবন্দরটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ঘাঁটির কাছে অবস্থিত। এই বিমানবন্দরটি প্রধানত সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে সীমিত বেসামরিক ফ্লাইটও এখান থেকে পরিচালিত হয়। কাবুল থেকে জালালাবাদে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পাওয়া যায়, যদিও এগুলোর সময়সূচী অনিয়মিত হতে পারে। ভ্রমণকারীদের ফ্লাইটের তথ্য আগে থেকে যাচাই করে নেওয়া উচিত। বিমানবন্দরের সুবিধাগুলো সীমিত, তাই প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা আগেই করে নেওয়া ভালো।
ট্রেনে
[সম্পাদনা]জালালাবাদে কোনো রেল সংযোগ নেই। আফগানিস্তানের রেল নেটওয়ার্ক খুবই সীমিত, এবং এই অঞ্চলে ট্রেন পরিষেবা বর্তমানে উপলব্ধ নয়।
গাড়িতে
[সম্পাদনা]জালালাবাদ কাবুল থেকে পাকিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত প্রধান সড়কপথে অবস্থিত। এই রুটটি আফগানিস্তানের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক, যেখানে খাদ্যসামগ্রী, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনকারী অসংখ্য ট্রাক চলাচল করে। কাবুল থেকে জালালাবাদের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার, এবং সড়কপথে যাতায়াতে সাধারণত ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে, সড়কের অবস্থা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে এই সময় পরিবর্তিত হতে পারে। ভ্রমণকারীদের স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। ব্যক্তিগত গাড়ি বা ভাড়া করা ট্যাক্সি দিয়েও এই পথে যাওয়া যায়, তবে অভিজ্ঞ ড্রাইভার নিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
বাসে
[সম্পাদনা]জালালাবাদে কাবুল এবং অন্যান্য নিকটবর্তী শহর থেকে বাস পরিষেবা রয়েছে। এই বাসগুলো সাধারণত স্থানীয় এবং আঞ্চলিক ভ্রমণকারীদের জন্য সাশ্রয়ী মাধ্যম। তবে, বাসের গুণমান এবং আরামের মাত্রা পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু বাসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলেও, বেশিরভাগই শুধুমাত্র মৌলিক সুবিধা প্রদান করে। ভ্রমণের সময়সূচী এবং টিকিটের প্রাপ্যতা স্থানীয় বাস টার্মিনাল থেকে জানা যায়। দীর্ঘ দূরত্বের বাসে রাত্রিযাপন এড়িয়ে দিনের বেলা ভ্রমণ করা নিরাপদ।
নৌকায়
[সম্পাদনা]জালালাবাদে কোনো নৌপথ বা নৌকা পরিষেবা নেই। এই অঞ্চলটি স্থলভিত্তিক, এবং নিকটবর্তী কোনো নদী বা জলাশয় ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত নয়। তবে, কাবুল নদী জালালাবাদের কাছ দিয়ে প্রবাহিত হলেও, এটি পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয় না।
ঘুরে বেড়ানো
[সম্পাদনা]জালালাবাদ শহরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিভিন্ন স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। শহরের অভ্যন্তরে রিকশা এবং ট্যাক্সি সবচেয়ে জনপ্রিয়। অটো-রিকশাগুলো সাশ্রয়ী এবং সহজেই পাওয়া যায়, বিশেষ করে বাজার এলাকা এবং প্রধান সড়কগুলোতে। ট্যাক্সিগুলো একটু বেশি আরামদায়ক এবং দীর্ঘ দূরত্বের জন্য উপযুক্ত। ভাড়া নিয়ে আগে থেকে দরদাম করে নেওয়া ভালো, কারণ মিটার ব্যবহার খুব একটা করা হয় না।
শহরের কেন্দ্রীয় এলাকাগুলো পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা সম্ভব, বিশেষ করে বাজার এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো। তবে, গ্রীষ্মের গরমে হাঁটা কঠিন হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি এবং সূর্য থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে যাওয়া উচিত। সাইকেল ভাড়া কিছু এলাকায় পাওয়া যায়, যা পরিবেশবান্ধব এবং স্বল্প দূরত্বের জন্য সুবিধাজনক।
জালালাবাদের রাস্তাগুলো প্রায়শই ব্যস্ত থাকে, বিশেষ করে বাজার এলাকায় এবং প্রধান সড়কগুলোতে। স্থানীয় ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলা এবং সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। শহরের বাইরে ভ্রমণের জন্য, যেমন কুনার নদীর তীরে বা নিকটবর্তী গ্রামাঞ্চলে, ভাড়া করা গাড়ি বা স্থানীয় গাইডের সাথে যাওয়া নিরাপদ। স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই অঞ্চলে পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল হতে পারে।
জালালাবাদের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে সিরাজ-উল-ইমারত বাগান, মৌসুমি ফলের বাজার এবং ঐতিহাসিক মসজিদ। এই স্থানগুলো স্থানীয় পরিবহন ব্যবহার করে সহজেই পৌঁছানো যায়। ভ্রমণকারীদের স্থানীয় রীতিনীতি ও পোশাকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত, বিশেষ করে ধর্মীয় স্থানে।
দেখুন
[সম্পাদনা]

জালালাবাদ আফগানিস্তানের অন্যতম সুন্দর শহর হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রচুর সবুজ গাছপালা এবং জলাশয় রয়েছে। শহরের প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গাজী আমানুল্লাহ খান সিটি নামে একটি নতুন শহর নির্মাণাধীন। রাজা আমানুল্লাহ খানের নামে নামকরণ করা এই শহরটি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম, সবচেয়ে বড় এবং অত্যাধুনিক শহর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি আধুনিক স্থাপত্য, পরিকল্পিত বিন্যাস এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধার জন্য উল্লেখযোগ্য।
জালালাবাদ আফগান ক্রিকেটের রাজধানী হিসেবে খ্যাত, এবং এখানকার আশপাশের এলাকা থেকে অনেক জাতীয় ক্রিকেট খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। শহরের কাছে শেরজাই ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, যা দেশীয় প্রতিযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হবে এবং আশা করা হচ্ছে এটি আন্তর্জাতিক দলগুলোকেও আকর্ষণ করবে। এছাড়া, জালালাবাদ তার ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত, যেখানে প্রাচীন স্থাপত্য থেকে প্রাকৃতিক জলাশয় পর্যন্ত বিভিন্ন আকর্ষণ রয়েছে।
- সারোবি জলাশয়: কাবুলের পথে অবস্থিত এই বড় জলাশয়টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ। এটি পিকনিক এবং আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয়।
- হাদা জাদুঘর, জালালাবাদের দক্ষিণে। জালালাবাদের দক্ষিণে অবস্থিত এই জাদুঘরে ইসলাম-পূর্ব যুগের প্রদর্শনী রয়েছে, যা এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরে। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং শিল্পকর্ম ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।
- শাহী কসর (প্রাসাদ)। প্রাক্তন রাজা জহির শাহের শীতকালীন প্রাসাদ। এই ঐতিহাসিক স্থানটি আফগান রাজতন্ত্রের গৌরবময় অতীতের সাক্ষী এবং এর স্থাপত্য দর্শনীয়।
- শেরজাই ক্রিকেট স্টেডিয়াম (নির্মাণাধীন)। জালালাবাদের কাছে নির্মাণাধীন এই স্টেডিয়ামটি আফগান ক্রিকেটের উন্নয়নে একটি মাইলফলক হবে। এটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
- যুবক পার্ক (জওয়ানানো পার্ক)। একটি জনপ্রিয় পার্ক যেখানে স্থানীয়রা বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য আসেন। এটি পরিবার এবং তরুণদের জন্য একটি আদর্শ স্থান।
- ঐতিহাসিক সেতু। জালালাবাদের প্রধান ঐতিহাসিক সেতু, যা অন্য তিনটি প্রদেশের সঙ্গে একমাত্র সংযোগস্থল। এটি শহরের ইতিহাস ও কৌশলগত গুরুত্বের প্রতীক।
- দারওয়ান্তা বাঁধ। তাজা মাছ, সবুজ পরিবেশ এবং বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য বিখ্যাত। এখানে নারী ও যুবকদের জন্য পার্ক, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়।
- গাজী আমানুল্লাহ খান সিটি (জালালাবাদ থেকে ১৫ কিমি দূরে)। এই নতুন শহরটি আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতীক হিসেবে নির্মিত হচ্ছে, যেখানে উন্নত আবাসন, বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে।
- নানগারহার বিশ্ববিদ্যালয়। আফগানিস্তানের একটি প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং শহরের একটি উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক।
- আমির শহীদ উদ্যান। একটি সুন্দর উদ্যান, যেখানে স্থানীয়রা বিশ্রাম ও পারিবারিক সময় কাটানোর জন্য আসেন। এটি শহরের সবুজ পরিবেশের একটি অংশ।
সমাধি
[সম্পাদনা]- 1 রাজা আমানুল্লাহ খানের সমাধি। আমানুল্লাহ খানের সমাধি, যিনি ১৯১৯ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাজা ছিলেন, প্রথমে আমির এবং ১৯২৬ সালের পর মালিক (রাজা) হিসেবে। এটি আফগান ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
- খান আবদুল গাফফার খানের সমাধি। খান আবদুল গাফফার খান, যিনি "সীমান্ত গান্ধী" নামে পরিচিত, একজন প্রখ্যাত অহিংস আন্দোলনকারী এবং পশতুন নেতা ছিলেন। তাঁর সমাধি ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্থান।
- মোহাম্মদ গুল খান মোমান্দের সমাধি। মোহাম্মদ গুল খান মোমান্দ ছিলেন একজন বিখ্যাত পশতুন কবি ও সাহিত্যিক। তাঁর সমাধি স্থানীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।
করণীয়
[সম্পাদনা]জালালাবাদে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে:
- মাছ ধরা: নদীর তীরে মাছ ধরা জালালাবাদের একটি জনপ্রিয় কার্যক্রম। দারওয়ান্তা বাঁধ এবং সারোবি জলাশয় এর জন্য উপযুক্ত স্থান।
- সাঁতার কাটা: নদী বা জলাশয়ে সাঁতার কাটা স্থানীয়দের মধ্যে প্রিয়। তবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং স্থানীয় নির্দেশনা মেনে সাঁতার কাটুন।
- পিকনিক: যুবক পার্ক বা আমির শহীদ উদ্যানে পরিবারের সঙ্গে পিকনিক করা একটি সাধারণ বিনোদন। এই পার্কগুলো সবুজ পরিবেশ এবং আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান করে।
- ক্রিকেট দেখা বা খেলা: জালালাবাদে ক্রিকেটের প্রতি উৎসাহ ব্যাপক। স্থানীয় মাঠে খেলা দেখা বা অংশ নেওয়া একটি মজার অভিজ্ঞতা হতে পারে।
- নৌকা ভ্রমণ: দারওয়ান্তা বাঁধে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে, যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।
কেনাকাটা
[সম্পাদনা]জালালাবাদের বাজারগুলো ঐতিহ্যবাহী এবং স্থানীয় পণ্যের জন্য বিখ্যাত:
- হস্তশিল্প: ঐতিহ্যবাহী পোশাক, গালিচা এবং তুলো দিয়ে তৈরি উপহার সামগ্রী। এগুলো স্থানীয় কারিগরদের দক্ষতার নিদর্শন।
- মাঙ্গি: বিভিন্ন ধরনের সিরামিক পণ্য, যেমন টেবিলওয়্যার এবং সাজসজ্জার জিনিস, যা স্থানীয় বাজারে জনপ্রিয়।
- পাকুল ও ওয়াসকট: ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাক, যার মধ্যে বিশেষ উষ্ণ টুপি এবং কালো জ্যাকেট রয়েছে। এগুলো শীতের জন্য উপযুক্ত এবং স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ।
- গয়না: জালালাবাদের বাজারে হাতে তৈরি রুপোর গয়না এবং পাথরের কাজ পাওয়া যায়, যা পশতুন নকশায় অনন্য।
- শুকনো ফল ও মশলা: আফগানিস্তানের বিখ্যাত শুকনো ফল, যেমন বাদাম, পেস্তা এবং কিশমিশ, এবং উচ্চমানের মশলা বাজারে পাওয়া যায়।
কেনাকাটার সময় দরদাম করা সাধারণ। হিন্দু স্ট্রিট এবং মুখাবেরাত চকের বাজারগুলো কেনাকাটার জন্য জনপ্রিয়। তবে, নিরাপদ উৎস থেকে কিনুন এবং স্থানীয় গাইডের সঙ্গে থাকলে কেনাকাটা আরও সহজ হবে।
টাকা-পয়সা
[সম্পাদনা]জালালাবাদে বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং মানি ট্রান্সফার সার্ভিস রয়েছে:
- আফগানিস্তান ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক (এআইবি): জালালাবাদে এর একটি শাখা রয়েছে, যেখানে এটিএম এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় সুবিধা পাওয়া যায়।
- নিউ কাবুল ব্যাংক: এটিএম এবং ব্যাংকিং সেবা সহ জালালাবাদে একটি শাখা রয়েছে।
- আজিজি ব্যাংক: জালালাবাদে এর শাখা আছে, যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে সহায়তা করে। (লিঙ্কটি ২০২৩ সালে নিষ্ক্রিয় ছিল)
- আফগানিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক: জালালাবাদে এর শাখা ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে।
- ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন: জালালাবাদে এর একাধিক অফিস রয়েছে, যেখানে টাকা পাঠানো বা গ্রহণের সুবিধা পাওয়া যায়।
ভ্রমণকারীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে তারা পর্যাপ্ত নগদ টাকা সঙ্গে রাখুন, কারণ অনেক জায়গায় ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করা হয় না। এটিএম থেকে টাকা তোলার সময় নিরাপত্তার প্রতি সতর্ক থাকুন।
খাওয়া
[সম্পাদনা]জালালাবাদের খাবার সংস্কৃতি আফগান ঐতিহ্য এবং স্থানীয় উপাদানের একটি সমৃদ্ধ মিশ্রণ:
- পাকোড়া: হিন্দু স্ট্রিটের বিখ্যাত পাকোড়া, যা মশলাদার এবং ক্রিস্পি। এটি স্থানীয়দের মধ্যে একটি জনপ্রিয় নাস্তা।
- পনির (পানির): জালালাবাদ এবং আশপাশের এলাকার প্রধান পণ্য। এই তাজা পনির পুরো আফগানিস্তানে বিখ্যাত এবং বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হয়।
- জলপাই: জালালাবাদের অসংখ্য জলপাই বাগান উচ্চমানের জলপাই সরবরাহ করে, যা বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো সালাদ এবং স্ন্যাক হিসেবে জনপ্রিয়।
- জলপাই তেল: স্থানীয় খাবারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর উচ্চ গুণমানের জন্য পরিচিত। জালালাবাদের জলপাই তেল রান্নায় একটি বিশেষ স্বাদ যোগ করে।
- কাবাব ও পোলাও: শহরের রেস্তোরাঁ এবং রাস্তার দোকানে বিভিন্ন ধরনের কাবাব (চপলি, সিক কাবাব) এবং আফগান পোলাও পাওয়া যায়। দারওয়ান্তা বাঁধের কাছে তাজা মাছের কাবাবও জনপ্রিয়।
- মিষ্টান্ন: আফগান হালুয়া এবং বাকলাভা স্থানীয় মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায়, যা বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।
মুখাবেরাত চকে ছোট রেস্তোরাঁ এবং খাবারের দোকান রয়েছে, যেখানে স্থানীয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবার খাওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং বোতলজাত পানি ব্যবহার করুন।
পান করা
[সম্পাদনা]জালালাবাদে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ এবং সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। এর পরিবর্তে, শহরে বিভিন্ন ধরনের সতেজ পানীয় পাওয়া যায়:
- তাজা জুস: মুখাবেরাত চকের জুসের দোকানগুলো সিজন অনুযায়ী তাজা ফলের জুস পরিবেশন করে, যেমন ডালিম, কমলা এবং আঙুরের জুস। এগুলো স্বাস্থ্যকর এবং স্বাদে ভরপুর।
- চা: আফগান সবুজ চা (কাহওয়া) এবং কালো চা স্থানীয়দের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। রাস্তার ধারের দোকানে চা পাওয়া যায়।
- লস্যি: লবণযুক্ত বা মিষ্টি লস্যি গরম দিনে সতেজ পানীয় হিসেবে পরিবেশন করা হয়।
- দোই: ঐতিহ্যবাহী দই-ভিত্তিক পানীয়, যা প্রায়ই খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
সবসময় সিল করা বোতলজাত পানি ব্যবহার করুন এবং স্থানীয় পানির গুণমান সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]জালালাবাদে থাকার ব্যবস্থা সীমিত, তবে কিছু হোটেল এবং গেস্টহাউস পাওয়া যায়। নিরাপত্তার কারণে পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য জায়গায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- 2 স্পিনঘর হোটেল (سپين غر هوټل) (শহরের পূর্ব দিকে)। শহরের বৃহত্তম পার্কের মধ্যে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক হোটেলটি পরিষ্কার এবং নিরাপদ। তবে, সুবিধাগুলো মৌলিক। সরকারি এই হোটেলটি বাজেট ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত।
- তাজ মহল গেস্টহাউস (জালালাবাদের প্রান্তে), ☎ +৯৩ ৭০০ ৬০ ৩৩ ৮৩। উষ্ণ এবং স্বাগত জানানো এই গেস্টহাউসটি জালালাবাদের প্রান্তে অবস্থিত। বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই, গ্রীষ্মকালে সুইমিং পুল এবং পূর্ব আফগানিস্তানের একমাত্র বার—টিকিবার—এখানে রয়েছে (যদি মদ্যপানীয় পাওয়া যায়)। খাবার এবং লন্ড্রি সেবা অন্তর্ভুক্ত।
৮০ মার্কিন ডলার।
- কাবুল গ্র্যান্ড হোটেল, মুখাবেরাত চকের কাছে, ☎ +৯৩ ৭৯৯ ৩৩ ৪৪ ৫৫। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই হোটেলটি আধুনিক সুবিধা প্রদান করে, যেমন এয়ার কন্ডিশনার, ওয়াই-ফাই এবং রেস্তোরাঁ। ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত।
৫০-১০০ মার্কিন ডলার।
ভ্রমণকারীদের আগে থেকে বুকিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ থাকার জায়গা সীমিত। নিরাপত্তার জন্য পরিচিত হোটেল বেছে নিন এবং স্থানীয় নিরাপত্তা পরামর্শ মেনে চলুন।
নিরাপদ থাকুন
[সম্পাদনা]জালালাবাদ এবং আফগানিস্তানের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্যের জন্য আফগানিস্তান পৃষ্ঠায় সতর্কতা দেখুন। ২০২৫ সাল পর্যন্ত, তালেবানের উপস্থিতি এবং চলমান সংঘাতের কারণে এলাকাটি পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নিম্নলিখিত পরামর্শ মেনে চলুন:
- স্থানীয় পোশাক পরুন এবং ইসলামী রীতিনীতির প্রতি সম্মান দেখান।
- একা ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন এবং স্থানীয় গাইডের সঙ্গে থাকুন।
- ফটোগ্রাফি বা ভিডিও গ্রহণের আগে অনুমতি নিন, বিশেষ করে সরকারি বা সামরিক এলাকায়।
- আপনার দেশের দূতাবাসে নিবন্ধন করুন এবং সর্বশেষ ভ্রমণ সতর্কতা যাচাই করুন।
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]- কাবুল: জালালাবাদ থেকে কাবুল গর্জের মধ্য দিয়ে গাড়িতে যাওয়া যায়, যদিও পথটি ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানী শহরটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণে ভরপুর।
- তুরখাম: খাইবার গিরিপথের মাধ্যমে পাকিস্তানের পেশোয়ারে যাওয়ার জন্য সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ট। তবে, সীমান্ত পারাপারের জন্য পারমিট এবং নিরাপত্তা সতর্কতা প্রয়োজন।
- কুনার প্রদেশ: জালালাবাদ থেকে কাছাকাছি এই প্রদেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাহাড়ি দৃশ্যের জন্য পরিচিত, তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি যাচাই করুন।