সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান
সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান।
জানুন
[সম্পাদনা]পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে নেপাল পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের সীমান্তে এই জাতীয় উদ্যানের অবস্থিতি। নেপালের সংলগ্ন এটি একটি জনপ্রিয় ট্রেকিং গন্তব্য। এখান থেকে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য ট্রেক করার বেশিরভাগ সময় দৃশ্যমান হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৮৬ সালে এই জাতীয় উদ্যানটিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। ১৯৯২ সালে এটিকে ভারতীয় জাতীয় উদ্যানে পরিণত করা হয়।
জীববৈচিত্র্য
[সম্পাদনা]এই জাতীয় উদ্যানে ওক, হেমলক, রূপালি দেবদারু, রূপালি ফার জাতীয় গাছ, বার্চ প্রভৃতি বৃক্ষ দেখা যায়। প্রাণীদের ভেতরে দেখা যায় লাল পান্ডা, সোনালী বিড়াল, বনবিড়াল ও কালো ভাল্লুক প্রভৃতি।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]এই জাতীয় উদ্যানটি পরিদর্শনের জন্য দুটি ঋতু হল বসন্ত (মার্চ-মে) এবং বর্ষার পরে (সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শুরু)। প্রতি বছর বর্ষার কারণে জাতীয় উদ্যানটি ১৬ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
দেখুন
[সম্পাদনা]- সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদে জানতে জর্জ থেঙ্গুমুটিলের "সিঙ্গালিলা ইন দ্য হিমালয়" নামক চলচ্চিত্রটি দেখতে পারেন। এই চলচ্চিত্রে ১৪ দিনের ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে সিঙ্গালিলার ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রবেশ করুন
[সম্পাদনা]সাধারণত এই জাতীয় উদ্যানটিতে মানেভঞ্জ্যাং থেকে পৌঁছানো যায়, যা দার্জিলিং থেকে ৩০ কিমি পশ্চিমে অবস্থিত এবং প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে। রিম্বিক থেকেও এখানে আসা যায়, যেখানে অনেক ট্রেকার ভ্রমণ শেষ করে। যারা অধিক অর্থ ব্যয়ের ব্যায় করতে পারবেন বা ট্রেকার নন এমন ব্যক্তিরা, অথবা যাদের সময়ের অভাব আছে, তারা মানেভঞ্জ্যাং থেকে সান্দাকফুতে পরিবহনের জন্য কোনো যানবাহন ভাড়া করতে পারেন এবং সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য রাত্রিযাপন করতে পারেন।
ট্রেন যোগে
[সম্পাদনা]নিকটতম রেলস্টেশন হল ঘুম (টংলু থেকে ৩১ কিমি দূরে)।
গাড়িতে করে
[সম্পাদনা]সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানটি সড়কপথে সুসংযুক্ত। এই পাহাড়ী পথের রাস্তাগুলি বৃত্তাকার এবং চারিদিকের দৃশ্য অপূর্ব।
ফি এবং পারমিট
[সম্পাদনা]ট্রেকারদের জাতীয় উদ্যানটিতে প্রবেশের জন্য ₹১০০ ফি দিতে হয় এবং একজন গাইড ভাড়া করতে হয়। মানেইভানজেং-এও পোর্টার ভাড়া করা যেতে পারে। অনেক ট্রেকার দার্জিলিং-এ ৩, ৫ বা ৬ দিনের বিভিন্ন ট্রেকিং কোম্পানির কাছে ট্রেকিংয়ের জন্য চুক্তি করেন। এক্ষত্রে ট্রেকিং কোম্পানিগুলি সমস্ত ব্যবস্থা করে দেয়। এই ট্রেকিংএ নেপালে কিছুক্ষণের জন্য অতিক্রম করার সময় পাসপোর্ট সঙ্গে করতে হবে, তারপর ভারতে ফিরে যেতে হবে। বেশিরভাগ রাতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে নেমে যাওয়ার কারণে স্লিপিং ব্যাগ এবং মোটা স্তরযুক্ত গরম পোশাকের আবশ্যক হয়।
ঘুরুন
[সম্পাদনা]দেখুন
[সম্পাদনা]করুন
[সম্পাদনা]- পাখি দেখা — সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান পূর্ব হিমালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাখি দেখার স্থানগুলির মধ্যে একটি, মৌসুমি ফুলের কারণে এখানে প্রচুর সংখ্যক পাখি আসে। পাখি দেখার জন্য ফুল ফোটার সময়টি সবচেয়ে ভালো সময়।
- সান্দাকফু–ফালুট ট্রেক — সান্দাকফু (৩,৬৩৬ মিটার) হলো পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ স্থান এবং ফালুট (৩,৬০০ মিটার) হল পশ্চিমবঙ্গের সর্বউত্তরের স্থান। এই ট্রেকিং পথটি উভয় স্থানকে একত্রিত করে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মাউন্ট এভারেস্টসহ আরও বেশ কয়েকটি তুষারশৃঙ্গের দুর্দান্ত দৃশ্য উপস্থাপন করে।
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]পথের ধারে বিভিন্ন কুঁড়েঘর বা সাধারণ গেস্টহাউসে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয় এবং একই স্থানে গরম খাবার পাওয়া যায়। মানেভাঞ্জ্যং থেকে শুরু করে, বেশিরভাগ ট্রেকাররা গাইরবাস বা কালিপোখরিতে রাত্রিযাপন করেন এবং দ্বিতীয় রাতের জন্য সান্দাকফুতে যান। ভোরে যখন দৃশ্যমানতা ভালো থাকে তখন ৩৬৩৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সান্দাকফু থেকে উচ্চ হিমালয়ের শৃঙ্গ লোৎসে, এভারেস্ট, মাকালু ইত্যাদি দেখার জন্য এটি একটি প্রিয় জায়গা। ৩ দিনের ট্রেকাররা তাদের শেষ রাতের জন্য একপাশে ঘুরে রিম্বিকের দিকে উতরাইয়ের দিকে যান, অন্যরা সাবরকুম এবং ফালুট থেকে দর্শনীয় দৃশ্য দেখার জন্য আরও উত্তরে যান, তারপর রমনের জন্য উতরাইয়ের দিকে যান এবং শেষ রাতের জন্য রিম্বিকে যান।
মেঘমায় থাকার জন্য সাইলুং টি হাউস একটি ছোট আরামদায়ক জায়গা। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) পরিচালিত টংলু, গাইরিবানস, সান্দাকফু, ফালুট, কালা পোখরি এবং আরও বেশ কয়েকটি স্থানে দুই কক্ষ বিশিষ্ট গেস্ট হাউস এবং ট্রেকারদের জন্য কুটির রয়েছে। মানেভঞ্জনে অসংখ্য গেস্ট হাউস এবং থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। জাতীয় উদ্যানটি পরিদর্শনের পছন্দের উপায় হলো দার্জিলিংয়ে থাকা এবং জাতীয় উদ্যানের ভিতরে ক্যাম্প করা।