চকবাজার শাহী মসজিদ | |
---|---|
![]() চকবাজার শাহী মসজিদ | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
অবস্থান | |
অবস্থান | চকবাজার, ঢাকা, বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৪২′৫৮″ উত্তর ৯০°২৩′৪৫″ পূর্ব / ২৩.৭১৬০° উত্তর ৯০.৩৯৫৭° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
স্থাপত্য শৈলী | মুঘল স্থাপত্য |
সম্পূর্ণ হয় | ১৬৭৬ |
বিনির্দেশ | |
ধারণক্ষমতা | প্রায় ১০,০০০ |
গম্বুজসমূহ | তিনটি |
মিনার | দুইটি বড় আটটি ছোট |
চকবাজার শাহী মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের পুরান ঢাকা এলাকার চকবাজারে অবস্থিত একটি মোগল আমলের মসজিদ। মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান এটিকে ১৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ করেন, মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে এই ধারণা করা হয়। এই মসজিদটিই সম্ভবত বাংলায় উঁচু প্লাটফর্মের উপর নির্মিত প্রাচীনতম ইমারত-স্থাপনা। প্লাটফর্মটির নিচে ভল্ট ঢাকা কতগুলো বর্গাকৃতি ও আয়তাকৃতি কক্ষ আছে। এগুলোর মাথার উপরে খিলান ছাদ রয়েছে, যার উপরের অংশ অবশ্য সমান্তরাল। ধারণা করা হয়, এই মসজিদের প্লাটফর্মের নিচের কক্ষগুলোতে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের আবাসন ছিল, এধরনের ভবনগুলোকে বলা হয় 'আবসিক-মাদ্রাসা-মসজিদ'।[১]
মসজিদটির আদি গড়নে ছিল তিনটি গম্বুজ। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে সংস্কারকার্য ও নির্মাণ সম্পাদনের ফলে বর্তমানে এর আদি রূপটি আর দেখা যায় না। মসজিদের ভিতরকার নকশা তিনটি বে'তে বিভক্ত ছিল, যার মাঝখানের বে ছিল বর্গাকার, কিন্তু দুপাশের বে ছিল আয়তাকার। তিনটি বে'র উপরেই গম্বুজ দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল, মাঝখানের গম্বুজটি ছিল তুলনামূলক বড় আকৃতির। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অষ্টকোণাকৃতির, যা সংস্কারের পরে আজও (২০০৬) সেরকমটাই রয়েছে।[১]
স্থাপত্য
[সম্পাদনা]তিন গম্বুজবিশিষ্ট নামাজ ঘরকে ঘিরে থাকা বারান্দাটি, যেহেতু আলাদা কোনো পাঠাগারের কাঠামো ছিল না, তাই সম্ভবত খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের জন্য ব্যবহৃত হতো। আর মাচার নিচে থাকা দেওয়ালজোড়া বুকশেলফসহ গম্বুজাকৃতির কক্ষগুলো সম্ভবত এখানে পড়ানো ও অধ্যয়নে নিযুক্ত ব্যক্তিদের বাসস্থানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে চক মসজিদ-কে প্রথম পরিচিত আবাসিক মাদ্রাসা মসজিদের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এটি একটি বুদ্ধিদীপ্ত উপায়—একটি ভবনে মাদ্রাসা ও মসজিদ উভয়কেই জায়গা দেওয়া হয়েছে, যা কেবল জায়গার সাশ্রয় করেছে তা-ই নয়, বরং অর্থেরও সাশ্রয় করেছে।[২]
একটি দরজার ওপরে খোদাই করা ফারসি শিলালিপি অনুযায়ী এই নির্মাণকাজ ১৬৬৪ খ্রিঃ সালে সম্পন্ন হয়। শিলালিপিতে এই প্রকল্পের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে সুবাহদার শায়েস্তা খান-কে। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, এটি বঙ্গের মুসলিম স্থাপত্য ইতিহাসে উচ্চভিত্তির ওপর নির্মিত তারিখ-নির্দিষ্ট প্রাচীনতম মসজিদ। এর স্থাপত্যরীতি সম্ভবত তুঘলক স্থাপত্যশৈলী থেকে প্রভাবিত ছিল; যেমন দিল্লির খিরকি মসজিদ বা কালান মসজিদ। এই মসজিদের প্রভাবে ঢাকা ও মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে আরও কিছু মসজিদ নির্মিত হয়।
ধারণা করা হয় যে, শায়েস্তা খান নিজেই এই ছন্দবদ্ধ শিলালিপিটি রচনা করেছিলেন, কারণ তার কাব্যিক ছদ্মনাম ছিল "তালিব"। শিলালিপিটি ছিল নিম্নরূপঃ[৩]
"সত্যপথে পরিচালিত আমির উল উমারা শায়েস্তা খান—ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য এই মসজিদ নির্মাণ করেন / যারা এর সময়কাল জানতে চায়—আমি বলি, 'ঈশ্বরের নির্দেশ সম্পন্ন হয়েছে' / ১০৮৬ হিজরি (১৬৭৫–৭৬ খ্রিঃ)।"
শিলালেখ
[সম্পাদনা]
মসজিদটিতে একটি শিলালিপি রয়েছে, যেখানে মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। হরিনাথ দে এই লেখাটির অনুবাদ করেছেন -
- "The Ameer of Ameers who cleaves to the right
- masjid Shaista did built in God's right,
- I said to the seeker enquiring its date
- Accomlished We know Was God's bidding"[৪]
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]- চকবাজার শাহী মসজিদ (উপরের-বাম দিকে) - ১৮৮৫ সালে জনস্টন এবং হফম্যানের তোলা ছবি
- চকবাজারের শাহী মসজিদের মিনার
- চকবাজারের শাহী মসজিদ
- চকবাজারের শাহী মসজিদ
- বড়কাটরার দিক হতে চকবাজারের শাহী মসজিদ
- মূল মেহরাব
- ভেতরের দৃশ্য
- চকবাজার শাহী মসজিদের সামনে ইফতার কেনাবেচা
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "চক মসজিদ (ঢাকা)", বাংলাপিডিয়া, সিডি ভার্ষণ 2.0.0। পরিদর্শনের তারিখ: জুলাই ১৩, ২০১১।
- ↑ * Husain, A. B. (2007). Architecture – A History Through Ages. Dhaka: Asiatic Society of Bangladesh (page 287).
- ↑ *Karim, Abdul. (1992) Corpus of the Arabic and Persian Inscriptions of Bengal. Dhaka: Asiatic Society of Bangladesh (page 469).
- ↑ Syed Aulad Hasan, "Notes on the Antiquities of Dacca", Dacca, 1912.
