জাতি-তাত্ত্বিক যাদুঘর
upright=250px
জাদুঘর ভবন
জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর, চট্টগ্রাম বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশে অবস্থান
স্থাপিত১৯৬৫ (1965)
অবস্থানআগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম
স্থানাঙ্ক২২°১৯′৪১″ উত্তর ৯১°৪৮′৪৬″ পূর্ব / ২২.৩২৮০৪৮৩° উত্তর ৯১.৮১২৮০৯৪° পূর্ব / 22.3280483; 91.8128094
ধরনজাতি-তাত্ত্বিক
সংগ্রহনৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর জীবনপ্রণালী
পরিদর্শক২০০-৩০০ (২০১৫)[]
তত্ত্বাবধায়কমোহাম্মদ আমিরুজ্জামান[]
মালিকবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
নিকটবর্তী পার্কিংনেই

জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদে অবস্থিত দেশের একমাত্র জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর। এটি মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনপ্রণালী, এবং পারষ্পরিক বোঝাপড়া ও সহকর্মী-অনুভূতি লালনের জন্য প্রতিষ্ঠিত।[] জাদুঘরে বাংলাদেশের উপজাতি গোষ্ঠীর ইতিহাস সমন্বিত উপকরণের প্রদর্শন করা হয়েছে।[]

এশিয়া মহাদেশের দুইটি জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের মধ্য চট্টগ্রামের জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর অন্যতম, অন্যটি রয়েছে জাপানে[] এটি গবেষণাকাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ২০১৫ সালের হিসেবে, জাদুঘর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন দেশি-বিদেশি গবেষকসহ ২০০-৩০০ জন দর্শনার্থী জাদুঘর পরিদর্শন করেন।[]

অবস্থান

[সম্পাদনা]

জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বাদামতলী মোড় সংলগ্ন ১.২৫ একর (০.৫১ হেক্টর) স্থানের ওপর প্রতিষ্ঠিত।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

বিশ শতকের ষাটের দশকের গোড়ার দিকে, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে জাদুঘরটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সে বছরই কাজ সম্পন্ন হলেও নির্মাণ ত্রুটির কারণে,[] ১৯৭৪ সালের ৯ জানুয়ারি সর্বসাধারণের জন্য জাদুঘরটি উন্মুক্ত করা হয়।[][] পরবর্তীকালে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে জাদুঘরে দুটি কক্ষ অন্তর্ভুক্ত হয়।[][] জানুয়ারি ৯, ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী এই জাদুঘর উদ্বোধন করেন।[]

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

একতলা বিশিষ্ট দক্ষিণমুখি জাদুঘরটি পাঁচটি ভাগে বিভক্ত, যেখানে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় হলঘরসহ সর্বমোট চারটি গ্যালারি। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি গ্যালারিতে তিনটি করে কক্ষ নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও শুধুমাত্র পশ্চিমের দুটি গ্যালারিতে দুটি করে কক্ষ নির্মিত হয়েছে। ফলে বর্তমানে জাদুঘরে সর্বমোট প্রদর্শনী কক্ষের সংখ্যা ১১টি।[]

জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর

জাদুঘরে ২৯টি বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর জীবনধারা প্রদর্শন করা হচ্ছে।[] বাংলাদেশের ২৫টি আদিবাসীসহ আরও ৫টি দেশের জাতিতাত্ত্বিক সামগ্রীর তুলনামূলক বিশ্লেষণে প্রদর্শিত রয়েছে।[] বাংলাদেশের বিভিন্ন আদি জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনধারায় প্রতিফলিত প্রত্ন সংস্কৃতির পরিচয়কে মানচিত্র, আলোকচিত্র, মডেল, কৃত্রিম পরিবেশ, দেওয়ালচিত্র, সংক্ষিপ্ত আলোকচিত্র, মডেল, কৃত্রিম পরিবেশ, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ফলক প্রভৃতি মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর প্রদর্শন করা হয়েছে। সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, স্নো, বম, খিয়াং, খুমি, চাক, রাখাইন, পাবেখো; সিলেট অঞ্চলের খাসিয়া, মনিপুরী, পাঙন, (মুসলিম মনিপুরি) পাত্র; ময়মনসিংহ অঞ্চলের গারো, হাজং, দালু, মান্দাই, কোচ; রাজশাহী-দিনাজপুর অঞ্চলের সাঁওতাল, ওরাঁও, রাজবংশী, পলিয়া, কোচ; এবং যশোর-ঝিনাইদহ অঞ্চলের বুনো, বা বোনা, বাগদি প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী অর্ন্তভুক্ত রয়েছে।[] পাশাপাশি পাকিস্তানের পাঠান, সিন্ধি, পাঞ্জাবী, কাফির, সোয়াত; ভারতের আদি, ফুওয়া, মুরিয়া, মিজো; কিরগিজস্থানের (প্রাক্তন রাশিয়া) কিরগিজ; অস্ট্রেলিয়ার অষ্ট্রাল জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন নির্দশন। এছাড়াও দুই জার্মানীর মিলন প্রাচীরের ভগ্নাংশের কিছু নির্দশন জাদুঘরে প্রদর্শিত আছে।[] ৩টি গ্যালারীতে ২৫টি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নানা রকমের সামগ্রী যেমন : অস্ত্র, ফুলদানী, কাপড়, নৌকা, কাচি, অলঙ্কার, বাঁশের পাইপ ইত্যাদি, এবং বাকি গ্যালারীতে ভারত, পাকিস্তানঅস্ট্রেলিয়ার কিছু সাম্প্রদায়ের জীবনপ্রণালী চিত্র, মডেল আকারে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা আছে।[] পাকিস্তানের পাঠান, সোয়াতি, সিন্ধি, কাফির এবং পাঞ্জাবি এই পাঁচটি গোষ্ঠির ভগ্নাবশেষ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আদি, মুরয়িা, মিজো এবং ফুতোয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[] হলরুমের মানচিত্র এবং দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে উপজাতিদের বিভিন্ন উৎসব ও সংস্কৃতি সম্পর্কেও ধারণা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।[] এছাড়াও উল্লেখযোগ্য হিসেবে রয়েছে ১৯৮৯ সালে ভেঙে ফেলা জার্মানির বার্লিন প্রাচীরের টুকরো অংশ।[]

জাদুঘরে রয়েছে একটি ছোট গ্রন্থাগার,[] এবং ভবনের সামনে রয়েছে সবুজ বাগান।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "জাতি-তাত্ত্বিক যাদুঘর (চট্টগ্রাম)"আমাদের চট্টগ্রাম। সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১২। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  2. Minhaj Uddin, Ctg। "Breaking & Latest News from Bangladesh"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১২ 
  3. মুহাম্মদ আবদুল বাতেন (২০১২)। "জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. "Ethnological Museum - Promoting Understanding in a Multi-Ethnic Society"। bangladesh.com। ১৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫The Ethnological Museum is one of the most specialized museums in Bangladesh and is a symbol of unity and progress. 
  5. ফায়িকা জাবিন সিদ্দিকা। "জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর"। parjatanbd.com। ১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫There are only two Ethnological Museum in Asia. One in Japan and another are in Chittagong of Bangladesh. 
  6. "Crumbling History"দ্য ডেইলি স্টার। ১২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  7. রহমান ২০২৩, পৃ. ১৩৫।
  8. অরুণ বিকাশ দে (৩ নভেম্বর ২০১১)। "Ethnological Museum: A treasure trove of rich antiquities"দ্য ডেইলি স্টার। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  • রহমান, মো. মাহবুবর (২০২৩)। "তৃতীয় অধ্যায়: বাংলাদেশের কতিপয় জাদুঘর পরিচিতি"। বাংলাদেশের জাদুঘর (প্রথম প্রকাশ সংস্করণ)। ঢাকা: সুবর্ণ। আইএসবিএন 9789849762737 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]