হাইল হাওর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অভয়ারণ্য | |
---|---|
অবস্থান | মৌলভীবাজার জেলা, সিলেট বিভাগ, বাংলাদেশ |
নিকটবর্তী শহর | মৌলভীবাজার |
স্থানাঙ্ক | ২৪°২২′০০″ উত্তর ৯১°৪১′০০″ পূর্ব / ২৪.৩৬৬৬৭° উত্তর ৯১.৬৮৩৩৩° পূর্ব |
আয়তন | ৮,৯০৬.০০ হেক্টর[১] |
স্থাপিত | ১৯৮৩[২] |
হাইল হাওর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অভয়ারণ্য (বাংলা: হাইল হাওর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অভয়ারণ্য) বাংলাদেশের একটি প্রধান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অভয়ারণ্য। এটি সিলেট অববাহিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিগুলোর একটি, যেখানে স্থানীয় এবং পরিযায়ী জলপাখিরা আশ্রয় নেয়। গ্রীষ্মকালে যখন আশেপাশের সব পানির উৎস শুকিয়ে যায়, তখন এই জলাভূমি এলাকার মানুষদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস হয়। অভয়ারণ্যটি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলাতে অবস্থিত।
বর্ণনা
[সম্পাদনা]অভয়ারণ্যটি মূলত দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব দিকে পাহাড় এবং উত্তরে মনু ও কুশিয়ারা নদীর সমভূমির মাঝে অবস্থিত।[৩] পাহাড়গুলোতে চা-বাগান এবং প্রাকৃতিক বন রয়েছে। জলাভূমির পানি বর্ষাকালে প্রায় ১৪,০০০ ha (১৪০ কিমি২) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, আর গ্রীষ্মকালে তা সংকুচিত হয়ে ৩,০০০ ha (৩০ কিমি২)-তে নেমে আসে। এই পানি ১৩০টি বিল ও সরু খালে সীমাবদ্ধ থাকে। জলাভূমির আশেপাশে ৬২টি গ্রামে প্রায় ১,৭২০০০ মানুষ বসবাস করে।[৪] বর্ষার পানি নামার পরে যেসব জমি উন্মুক্ত হয়, সেগুলো স্থানীয়রা ধানক্ষেত হিসেবে ব্যবহার করে।[৫] বাংলাদেশ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত 'কমিউনিটি হাসব্যাণ্ড্রির মাধ্যমে জলজ বাস্তুতন্ত্রের ব্যবস্থাপনা' নামে একটি প্রকল্প পরিচালনা করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে জলাভূমি সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করা হয়।[৬]
অবস্থান
[সম্পাদনা]এটি শ্রীমঙ্গল (বাংলা: শ্রীমঙ্গল)-এর উত্তর-পশ্চিমে ৩ কিমি[রূপান্তর: অজানা একক] এবং মৌলভীবাজার-এর দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৪ কিমি[রূপান্তর: অজানা একক] দূরে অবস্থিত।
আবহাওয়া
[সম্পাদনা]এলাকাটির জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি। এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ৪,০০০ মিমি[রূপান্তর: অজানা একক], যার বেশিরভাগই জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হয়। শ্রীমঙ্গল এলাকায় সাধারণত শীতকালে তাপমাত্রা ৯ °সে (৪৮ °ফা) এবং গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ৩২.৮ °সে (৯১.০ °ফা) পর্যন্ত ওঠে।[৫]
প্রশাসন
[সম্পাদনা]শিকার ও চোরাশিকার থেকে জলপাখিদের রক্ষা করতে বন বিভাগ এখানে একটি কেন্দ্র স্থাপন করেছে।[৫]
জীববৈচিত্র্য
[সম্পাদনা]এখানে উদ্ভিদ ও প্রাণীজীবনের বেশিরভাগই জলাভূমি পরিবেশের সাথে মানানসই।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
উদ্ভিদ
[সম্পাদনা]হাওরের বেশিরভাগ অংশে ভারতীয় পদ্ম (Nelumbo nucifera) এবং কচুরিপানা (Pontederia crassipes) ছড়িয়ে আছে। এখানে আরও নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ জন্মে, যেমন Typha elephantina, Trapa bispinosa, Hygrorhiza aristata, এবং Utricularia, Ceratophyllum, Vallisneria, Hydrilla, Najas, Potamogeton, Nymphoides, Pistia, Lemna ও Azolla প্রজাতি। হাওরের আশেপাশের এলাকায় বাঁশ, কলা, আম, জাতীয় বিভিন্ন গাছ ও ঝোপঝাড় দেখা যায়।
প্রাণী
[সম্পাদনা]অভয়ারণ্যটিতে নানা প্রজাতির জলপাখি দেখা যায়, যাদের সংখ্যা শীতকালে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে কম বাঁশি হাঁস, ফুলভাসি হাঁস, কটন পিগমি গুজ, গারগানী, উত্তরী পিনটেইল, উত্তরী শোভেলার, কমন টিল, কমন পচার্ড, টাফটেড ডাক, গ্যাডওয়াল, স্পটবিল ডাক, বার-হেডেড গুজ, গ্রেলাগ গুজ, রুডি শেলডাক, কম্ব ডাক, টিল, ম্যালার্ড, রেড-ক্রেস্টেড পচার্ড, কমন পচার্ড, বেয়ারের পচার্ড, গ্রিব, ছোট পানকৌড়ি, ভারতীয় পান-বক, গরু-বক, ছোট বক, মাঝারি বক, বড় বক, ওয়াটার কক, মুরহেন, বেগুনি কালেম, কমন কুট, ফেজেন্ট-টেইলড জ্যাকানা, ব্রোঞ্জ-উইংড জ্যাকানা, পাশাপাশি বক, মাছরাঙা, বক ও টার্ন প্রভৃতি। শিকারি পাখিদের মধ্যে রয়েছে অস্প্রে, ইউরেশিয়ান মার্শ হ্যারিয়ার এবং পাইড হ্যারিয়ার।[৫] বিপন্ন পাখিদের মধ্যে আছে বেয়ারের পচার্ড, বৃহত্তর চিতাবাঘ ঈগল এবং পাল্লাসের মাছ-খেকো ঈগল।[১] এই অভয়ারণ্যকে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল গুরুত্বপূর্ণ পাখির এলাকা (আইবিএ) হিসেবে ঘোষণা করেছে।[৭]
এছাড়া, এখানে বিভিন্ন ধরনের উভচর, সরীসৃপ ও কচ্ছপ দেখা যায়। মাছের মধ্যে রয়েছে কাতলা কাতলা, লাবেও রোহিতা, এল. কালবাসু, এল. গোনিয়াস, চির্রিনা মৃগালা, বারবাস প্রজাতি, ওয়ালাগো আট্টু, মিস্টাস তেংরা, মিস্টাস আওর, ওমপোক পাবদা, গাদুসিয়া চাপরা, ক্লুপিয়া প্রজাতি, নোটোপ্টেরাস নোটোপ্টেরাস, ক্লারিয়াস বাত্রাকাস, হেটারোপ্নিউস্টেস ফসিলিস, চানা প্রজাতি, অ্যানাবাস টেস্টুডিনিউস ও কোলিস আফাসিওটা। এছাড়া ম্যাক্রোব্রাকিয়াম গোত্রের দেশীয় চিংড়িও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।[৮]
হুমকি
[সম্পাদনা]- বর্তমান জলাভূমিগুলো পলিভরন, কৃষি ও শিল্পের জন্য নিষ্কাশন এবং ভরাটের হুমকিতে রয়েছে। কৃত্রিম বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করে জলাধারকে ছোট ছোট মাছ চাষের প্লটে রূপান্তর করা হয়েছে। এর ফলে মাছ ও জলপাখির সংখ্যা কমে গেছে।[৬]
- বৃক্ষের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ হলো কৃষি জমির জন্য দখল, আগাছার আক্রমণ, গবাদিপশুর চারণ, অপ্রধান বনজ সম্পদ ও জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, অগ্নিকাণ্ড, নতুন রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ।
- জলাভূমির আশেপাশে বড় সংখ্যক মানুষ বসবাস করে। তাদের বেশিরভাগই অভিবাসী, যারা মৎস্য শিকার ও চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত।[৫]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "বাংলাদেশ" (PDF)। datazone.birdlife.org।
- ↑ "দারিদ্র্য হ্রাসে বন: সিডিএম, পরিবেশগত সেবা ও জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত কর্মশালার কার্যবিবরণী"। www.fao.org।
- ↑ "দক্ষিণ এশিয়ার সংরক্ষিত এলাকার আইইউসিএন ডিরেক্টরি" (পিডিএফ)। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ। ১৯৯০। পৃ. ১৪।
- ↑ দেব, বিশ্বজিৎ কুমার (মার্চ ২০১১)। বাংলাদেশের জলাভূমি ও বনের সহ-ব্যবস্থাপনায় গ্রামীণ জীবনযাপন (পিডিএফ)। হোনলুলু, হাওয়াই: ইউএসএইড। পৃ. ৬৬। ৩ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে (পিডিএফ) আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "দক্ষিণ এশিয়ার সংরক্ষিত এলাকার আইইউসিএন ডিরেক্টরি" (পিডিএফ)। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ। ১৯৯০।
- ↑ ক খ Thompson, Paul; বালাসিনোরওয়ালা, তাসনিম (ডিসেম্বর ২০১০)। "জলাভূমি ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ, হাইল হাওর, বাংলাদেশ" (পিডিএফ)। TEEBweb.org।
- ↑ "হাইল হাওর"। বার্ডলাইফ ডেটা জোন। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল। ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "দক্ষিণ এশিয়ার সংরক্ষিত এলাকার আইইউসিএন ডিরেক্টরি" (পিডিএফ)। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ। ১৯৯০। পৃ. ১৫।